বাংলাদেশে নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। শুধুমাত্র ফেব্রুয়ারি মাসেই ১৮৯ জন নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে—এটি আমাদের সমাজের ভয়ংকর বাস্তবতা। নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব, কিন্তু বাস্তবতা হলো, সরকার এই দায়িত্ব পালনে বারবার ব্যর্থ হয়েছে।
নারী ও শিশু নির্যাতনের পরিসংখ্যান কেবল সংখ্যা নয়, বরং এটি প্রতিটি নির্যাতিত মানুষের ব্যথার গল্প, ভাঙা স্বপ্ন ও ন্যায়বিচার না পাওয়ার আর্তনাদ। বাংলাদেশে ধর্ষণ, পারিবারিক সহিংসতা, যৌন হয়রানি, শিশু নির্যাতন ও হত্যা বেড়েই চলেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অপরাধীরা রাজনৈতিক আশ্রয়ে থেকে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যায়, ফলে অপরাধের মাত্রা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। ফেব্রুয়ারি মাসের ১৮৯ জন নির্যাতিত নারী ও শিশুর মধ্যে: ধর্ষণের শিকার হয়েছে বহু নারী ও কিশোরী। পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে অনেক নারী আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। শিশুদের ওপর শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার মতো অমানবিক ঘটনা ঘটেছে।
বাংলাদেশে নারী ও শিশু সুরক্ষার জন্য অনেক আইন থাকলেও, বাস্তবে তা কার্যকর হয় না। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় তারা আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠছে। ক্ষমতাসীন সরকারের অবহেলা, দুর্নীতি ও প্রশাসনের অনেকেই নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের সাথে জড়িত, কিন্তু তারা প্রশাসনিক প্রভাব খাটিয়ে পার পেয়ে যায়। অনেক ভুক্তভোগী থানায় গিয়ে মামলা করতে পারেন না, উল্টো পুলিশ ও প্রশাসনের কাছ থেকেই হয়রানির শিকার হন। বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেক নির্যাতিত পরিবার ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা ছেড়ে দেয়। নারীদের অধিকার, আত্মরক্ষা ও সচেতনতা তৈরির জন্য পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। বরং সমাজে নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতাকে স্বাভাবিক করে তোলা হচ্ছে।
নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা কোনো ব্যক্তি বা পরিবারের সমস্যা নয়, এটি গোটা সমাজ ও রাষ্ট্রের ব্যর্থতা। যদি এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে।
বাংলাদেশ কি শুধুই পরিসংখ্যান দেখিয়ে যাবে, নাকি সত্যিকার অর্থে নারী ও শিশুদের সুরক্ষা দিতে উদ্যোগ নেবে? সরকারের কাছে এখনই জবাবদিহিতা চাই।
