CategoriesDemocracyHuman RightsJusticePolitics

উসমান হাদী হত্যাকাণ্ড: সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও ভারতের প্রভাব এবং সরকারের ব্যর্থতা

উসমান হাদীর ওপর সন্ত্রাসী হামলায় দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তার জন্য এক ভয়ঙ্কর সংকেত হিসেবে দেখা যাচ্ছে। এটি নিছক এক ব্যক্তিগত হত্যাকাণ্ড নয়, বরং দীর্ঘদিন ধরে জমে ওঠা রাজনৈতিক সহিংসতা, বিচারহীনতা এবং ভিন্নমত দমনের সংস্কৃতির ফল। উসমান হাদী ছিলেন একজন সক্রিয় সাহসী রাজনৈতিক কর্মী, চিন্তাবিদ এবং মানবাধিকার রক্ষাকারী, যিনি ভারতের আধিপত্যবাদ, স্থানীয় চাঁদাবাজি, রাজনৈতিক দুর্নীতি ও সন্ত্রাসভিত্তিক রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলতেন। তার সাহসিকতার কারণে তিনি দীর্ঘদিন ধরে হুমকি ও ভয়ভীতির মধ্যে ছিলেন, যা রাষ্ট্রের জানা থাকা সত্ত্বেও কোনো কার্যকর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। একজন নাগরিক যখন নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়, ভোটে দাঁড়ায় এবং জনগণের সমর্থন অর্জন করে, তখন রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব হয় তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু এই দায়িত্ব পালন না করার ফলে সন্ত্রাসীরা সাহস পেয়ে প্রকাশ্যে হত্যাচেষ্টা করতে সক্ষম হয়েছে। এর মাধ্যমে একটি ভয়ঙ্কর বার্তা দেওয়া হয়েছে যে ভিন্নমত প্রকাশ এবং রাজনৈতিক প্রতিবাদ করার সাহসী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার চেষ্টা করা হবে। এটি শুধু একজন ব্যক্তির জীবন নয়, দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর সরাসরি আঘাত। এই ঘটনায় রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থার অযোগ্যতা এবং রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অক্ষমতা স্পষ্ট হয়েছে, যা দেশের নাগরিকদের মনে গভীর আতঙ্ক এবং অবিশ্বাস তৈরি করেছে। জনগণ এখন প্রশ্ন করছে, কি রাষ্ট্র তাদের মৌলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না, এবং যদি পারে, তাহলে কেন আগাম ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এই হত্যাকাণ্ড দেশের রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক, ব্লগার এবং একটিভিস্টদের মধ্যে তীব্র নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করেছে। দেশের বিভিন্ন অংশে যারা সমাজ, রাজনীতি এবং মানুষের অধিকার নিয়ে কাজ করছেন, তারা ভয়ভীতির মধ্যে জীবন-যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। প্রতিদিন রাজনৈতিক সহিংসতা, হত্যাচেষ্টা এবং হুমকি প্রদর্শনের ঘটনায় জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের সদস্যদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ থাকলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এতে সাধারণ মানুষ মনে করছে যে কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠী, তাদের দোসর ভারতের প্রভাব এ ধরনের সহিংসতা উদ্দীপিত করছে। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্র যদি সুষ্ঠু তদন্ত এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে মানুষের সন্দেহ কেবল বেড়ে যাবে। যখন জনগণ দেখছে যে বারবার হামলার পরেও শাস্তি হচ্ছে না, তখন তারা বিশ্বাস করতে শুরু করে যে সন্ত্রাসই রাজনৈতিক পরিবেশের নিয়ন্ত্রক শক্তি। এই অবস্থা শুধু নিরাপত্তাহীনতার সৃষ্টি করছে না, বরং দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীন মতপ্রকাশ এবং রাজনৈতিক অংশগ্রহণের উপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলছে। দেশের মানুষ আজ চাইছে দৃঢ় পদক্ষেপ, যাতে ভবিষ্যতে কেউ রাজনৈতিক কারণে প্রাণের ঝুঁকিতে না পড়ে। এই পরিস্থিতি রাষ্ট্রের জন্য একটি সতর্কবার্তা যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আইনের শাসন এবং প্রশাসনিক কার্যকারিতা ছাড়া গণতন্ত্র টিকে থাকতে পারবে না।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইন উপদেষ্টাদের অক্ষমতা এই পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে। যদিও সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ নেই, তবুও নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়া রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইন উপদেষ্টাদের মূল দায়িত্ব ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগের গতিবিধির ওপর নজরদারি এবং দেশের রাজনৈতিক কর্মী, জার্নালিস্ট, ব্লগার, একটিভিস্টদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালিত হয়নি। আগাম সতর্কতা, গোয়েন্দা তথ্যের ব্যবহার এবং কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া স্পষ্ট ব্যর্থতার উদাহরণ। রাষ্ট্র যদি এই দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সন্ত্রাসীরা স্বাভাবিকভাবেই সাহস পায় এবং তাদের কার্যক্রম বেড়ে যায়। এই ব্যর্থতার কারণে দেশের সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক কর্মী, ব্লগার ও সাংবাদিকরা নিরাপত্তাহীনতায় থাকছেন, যা গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য বিপজ্জনক। তাই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও আইন উপদেষ্টাদের পদত্যাগের দাবি একটি যৌক্তিক ও নৈতিক দাবি হিসেবে উঠে এসেছে। এটি শুধু ব্যক্তিগত পদক্ষেপ নয়, বরং রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে জনমতের রায় এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অতি জরুরি আহ্বান। যদি পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয়, তাহলে বার্তা যাবে যে সন্ত্রাসই দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার নিয়ন্ত্রক শক্তি, যা গণতন্ত্রের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনবে।

হাদী হত্যাকাণ্ডের পর জনগণের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এই হামলার সঙ্গে যুক্ত সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের সদস্যদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা এবং খুনি সন্ত্রাসী পালাতক যারা বিদেশে অবস্থান করছে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা। বিশেষ করে ভারতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, কারণ অনেক আসামি সেখানে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে কিন্তু ভারত সেই খুনি আসামীদের ফেরত দিচ্ছেনা। যদি ভারতে অবস্থানরত খুনিরা ফেরত না আসে, তাহলে ভারতের বিরুদ্ধে কূটনৈতিকভাবে কঠোর অবস্থান নেওয়া একটি সার্বভৌম দেশের অধিকার। ভারতের হাইকমিশনারকে বিতাড়িত করা উচিত যদি হত্যাকারীদের ফেরত না দেওয়া হয়। একই সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত স্বৈরাচারী শাসনের প্রতীক খুনি হাসিনাকেও ফেরত এনে বিচারের মুখোমুখি করে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এই দাবিগুলো রাজনৈতিক প্রতিশোধ নয়, বরং ন্যায়বিচার, নিরাপত্তা এবং দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষার জন্য অপরিহার্য। উসমান হাদীর রক্ত দেশের নাগরিক এবং গণতন্ত্রের প্রতি সরকারের দায়িত্বের অগ্রাহ্যতার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী সতর্কবার্তা। যদি সরকার কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও সহিংসতা, বিভাজন এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার ঝুঁকি অনিবার্য হবে। এখন সময় এসেছে আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ ও ভারতের সার্মাজ্যবাদ নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার, নীরব থাকার নয়, কারণ নীরবতা এই দেশের গণতন্ত্রকে ভয়াবহ হুমকির মুখে ফেলবে।