CategoriesDemocracyHuman RightsJusticePolitics

নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের মিছিল সরকার ও প্রশাসনের অবহেলা

সম্প্রতি আমতলী উপজেলা ছাত্রলীগের এক মশাল মিছিল ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও, সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের এই মিছিল কার্যক্রম ধ্বংসাত্মকভাবে অনুষ্ঠিত হলো। বিষয়টি শুধু স্থানীয় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ নয়, বরং বাংলাদেশের গণতন্ত্র, আইন শৃঙ্খলা এবং মানুষের নিরাপত্তা বিষয়ে গভীর শঙ্কা জাগাচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, কেন সরকার এবং প্রশাসন পুরোপুরি নিষিদ্ধ সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ করতে ব্যর্থ হলো এবং এর ফলে দেশের নাগরিক সমাজে ভীতির পরিবেশ তৈরি হলো। এ ঘটনায় সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো সরকারের ভূমিকা। সাধারণত, যখন কোনো রাজনৈতিক সংগঠন বা গোষ্ঠী আইন অমান্য করে, তখন প্রশাসন বাধ্য থাকে ব্যবস্থা নিতে। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে পরিচিত কয়েকজন উপদেষ্টা সরকারের সাথে কাজ করার কারণে এবং কিছু আওয়ামীলীগের পুলিশ কর্মকর্তা দলের পক্ষপাতিত্বের কারণে নিষিদ্ধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সরকারের দায়িত্ব হলো দেশের সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আইন রক্ষা করা, কিন্তু প্রশাসন রাজনৈতিক দল ও তাদের সমর্থকের প্রভাবের কাছে সামর্থ্য হারিয়েছে। এই ব্যর্থতা শুধু একটি মিছিল বন্ধ করতে না পারার গল্প নয়, বরং সরকারের নৈতিক ও প্রশাসনিক শক্তিহীনতার প্রতিচ্ছবি। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের মিছিল কেবল স্থানীয় জনগণকে ভয় দেখানির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। এটি দেশের আইন, ন্যায়বিচার এবং গণতান্ত্রিক মানগুলিকে চ্যালেঞ্জ করলো। যখন সরকার এবং পুলিশ সক্রিয়ভাবে এই ধরনের কার্যক্রম ঠেকাতে ব্যর্থ হয়, তখন সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে রাষ্ট্রের আইন এবং শৃঙ্খলা রাজনৈতিক স্বার্থের কাছে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। এটি ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারের মতো আচরণের জন্ম দেয়, যেখানে ক্ষমতা নির্ভর রাজনৈতিক কিছু লোক তাদের ইচ্ছামতো আইন অমান্য করতে পারে।

একটি স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে, সরকারের দায়িত্ব হলো পক্ষপাতিত্ব ছাড়া আইন প্রয়োগ করা। কিন্তু এই ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, সরকার এবং প্রশাসন আওয়ামী লীগের উগ্র সমর্থকদের দিকে চোখ বন্ধ করে দেখছে। তারা রাজনৈতিক প্রভাবশালী দোসর ও নেতাদের প্রভাবের কারণে কঠোর পদক্ষেপ নিতে সাহস পাচ্ছে না। এর ফলে দেশের মানুষ আইনহীনতার শিকার হচ্ছে, তাদের নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতার ওপর আঘাত পড়ছে, এবং দেশের গণতন্ত্র ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে। সরকারকে এবং প্রশাসনকে জবাবদিহি করতে হবে। কেন তারা আইন লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি? কেন তারা রাজনৈতিক দলের স্বার্থের জন্য জনগণের অধিকার এবং নিরাপত্তাকে উপেক্ষা করেছে? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর নাগরিকদের কাছে দেওয়া দরকার। ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রকে রক্ষা করার দায়িত্ব সরকারের, কিন্তু তারা যদি রাজনৈতিক প্রভাবের কাছে পরাস্ত হয়, তবে জনগণকে আর কোনো সুরক্ষা নেই। আমতলী উপজেলা ছাত্রলীগের মশাল মিছিল শুধু একটি ঘটনা নয়। এটি একটি শক্তিশালী ইঙ্গিত যে, দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা ও প্রশাসনিক কার্যক্রমকে কতটা রাজনৈতিক স্বার্থের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। এটি দেখাচ্ছে, কতটা সহজে উদাহরণ তৈরি করা যায়, যেখানে আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক দলের দোসর এবং তাদের পুলিশ সমর্থকরা সাধারণ মানুষকে ভীতি প্রদর্শন করতে পারে।

নাগরিক সমাজ, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী এবং রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা এই ঘটনার দিকে তাকিয়ে কেবল প্রশ্নই তুলছেন না, তারা সরকারি ও প্রশাসনিক দায়িত্বহীনতার বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনাও করছেন। এটি সময়ের ডাক, যাতে সরকার ও প্রশাসন তাদের দায়িত্বে ফিরে আসে, রাজনৈতিক পক্ষপাত ভুলে জনগণের অধিকার ও নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেয়, এবং ভবিষ্যতে এমন ফ্যাসিস্ট মনোভাবের কোনো সুযোগ না থাকে। গণতন্ত্র এবং ন্যায়বিচার রক্ষার জন্য আজ সরকারের শুদ্ধিকরণ ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। রাজনৈতিক স্বার্থের কাছে জনগণকে ভিক্ষুক বানিয়ে রাখা আর নয়, শক্তিশালী এবং স্বচ্ছ প্রশাসন প্রতিষ্ঠার সময় এসেছে। যদি না আসে, তবে আমাদের দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং বাকস্বাধীনতা কেবলই কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।