CategoriesDemocracyHuman RightsJusticePolitics

উসমান হাদীর ওপর গুলি কেন? সন্ত্রাসী আক্রমণ ও হত্যা চেষ্টা

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ দীর্ঘদিন ধরে সহিংসতা, সন্ত্রাস এবং রাজনৈতিক হত্যার প্রেক্ষাপটে ভেঙে যাচ্ছে। শুক্রবার উসমান হাদীর ওপর সন্ত্রাসীরা গুলি চালিয়ে শুধু একজন রাজনৈতিক কর্মীকে নিশানা করেনি, বরং দেশের নাগরিক, গণতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর সরাসরি আঘাত হানেছে। উসমান হাদী একজন চিন্তাবিদ, রাজনীতিবীদ এবং দেশের গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধ রক্ষার অগ্রপথিক। তিনি ভারতীয় আধিপত্যবাদ, স্থানীয় চাঁদাবাজি, রাজনৈতিক দুর্নীতি এবং আওয়ামী ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন। এই কারণে তিনি আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী, মাফিয়া এবং উগ্র রাজনৈতিক শক্তির কাছে সরাসরি হুমকি হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। নির্বাচনে দাঁড়িয়ে চাঁদাবাজি ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী মাফিয়াদের ভয় দেখানো তার সাহসকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার লক্ষ্য বানানো হয়েছে। এই হামলা শুধু একজন ব্যক্তিকে নিশানা করার প্রচেষ্টা নয়, বরং দেশের নাগরিক নিরাপত্তা এবং গণতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর সরাসরি আঘাত। এসব হামলার দায় বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার এড়াতে পারেনা। সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসী প্রধানমন্ত্রী হাসিনার দোসর। এদের মদদেই সন্ত্রাসীরা হামলা ও গুলি করার সাহস পায়। সাধারণ মানুষ আজ ভীত, অনিশ্চিত এবং বিভ্রান্ত। জনগন আজ বুঝতে পারছে যে বর্তমান সরকার নিরপেক্ষ নয় ক্ষমতার কাছে নত এবং আইন সব নাগরিকের জন্য সমানভাবে কার্যকর হচ্ছে না। রাষ্ট্রের দায়িত্বহীনতা, প্রশাসনের পক্ষপাত এবং রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে এই ধরনের হামলা ও হত্যাচেষ্টা ক্রমেই বেড়ে চলেছে, যা দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য ভয়ঙ্কর সংকেত হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

উসমান হাদীর ওপর হামলার প্রেক্ষাপটে আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো মিটিয়ের সময়ে উপস্থিত নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের সাবেক কর্মী এবং কিছু তথ্য অনুযায়ী আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীরা ও ভারতের RAW যুক্ত থাকার সম্ভাবনা। এটি প্রমাণ করে যে শুধু স্থানীয় রাজনৈতিক সংঘাত নয়, আন্তর্জাতিক এবং কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক প্রভাবও এই হামলার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক কর্মী এবং সাংবাদিকদের ওপর চাপ সৃষ্টি, হত্যা এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে দমন করার এই সংস্কৃতি রাষ্ট্রের দায়িত্বহীনতা এবং পক্ষপাতিত্বকে উন্মোচন করছে। জনগণের মধ্যে ভয়, অনিশ্চয়তা এবং বিভাজন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক কাঠামোকে দুর্বল করছে। এই ধরনের সহিংসতা শুধু উসমান হাদীর নিরাপত্তা নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং নাগরিকদের বিশ্বাসও ক্ষুণ্ণ করছে। সাধারণ মানুষ ক্রমেই বুঝতে পারছে, যদি সরকারের পক্ষপাতিত্ব না থাকে, তারা নিজেও সন্ত্রাস ও হত্যার শিকার হতে পারে। রাষ্ট্রের অক্ষমতা এবং রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে এই সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি, যা ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও আইনশৃঙ্খলার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে বাধ্য। সাধারণ মানুষের ভয় ও অনিশ্চয়তা রাজনৈতিক অংশগ্রহণকে সীমিত করছে এবং দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর ওপর দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি সৃষ্টি করছে।

বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার এবং প্রশাসন এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তারা হত্যাকারী এবং চাঁদাবাজদের আদালতে জামিন দেয়, মিডিয়ায় সুযোগ করে দেয় এবং সীমান্তে নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করে। সরকারের এই উদাসীনতা শুধু উসমান হাদীর জীবনকে বিপন্ন করছে না, বরং দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে আরও অস্থিতিশীল করছে। সাধারণ নাগরিক, রাজনৈতিক কর্মী এবং সমাজের সূর্য সন্তানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কোনো দৃঢ় পরিকল্পনা নেই। প্রশাসনের উদাসীনতা স্পষ্ট প্রমাণ করছে যে রাজনৈতিক স্বার্থ সন্ত্রাসীদের সাহস বাড়াচ্ছে। দেশের মানুষ ক্রমেই বুঝতে পারছে যে সরকার নাগরিকদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে না এবং রাজনৈতিক দমন-পীড়নকে হালকা বলে দেখছে। এই উদাসীনতা ভবিষ্যতে আরও বড় হত্যার চেষ্টা এবং রাজনৈতিক সহিংসতার জন্ম দিতে পারে। এতে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো এবং জনগণের আস্থা ক্রমেই ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। মানুষের মধ্যে ভীতির পরিবেশ তৈরি হওয়ায় রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, স্বাধীন মতপ্রকাশ এবং নাগরিক অংশগ্রহণও সীমিত হচ্ছে, যা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য বিপজ্জনক। সরকারের পক্ষপাত, রাজনৈতিক স্বার্থ এবং অক্ষমতা ভবিষ্যতে আরও বড় রাজনৈতিক সংকটের জন্ম দিতে পারে।

বিগত দুই দিনে দুটি জুলাই যোদ্ধার হত্যাকাণ্ড এবং উসমান হাদীর ওপর হামলা প্রমাণ করছে যে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। সরকার না চাইলেও স্বাভাবিকভাবেই এই হামলার সঙ্গে রাজনৈতিক এবং ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর জড়িত থাকার সন্দেহ উন্মোচিত হচ্ছে। এই ধরনের পরিস্থিতি বিভাজন, ভীতির সংস্কৃতি এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। সাধারণ জনগণ বুঝতে পারছে যে তাদের নিরাপত্তা, স্বাধীন মতপ্রকাশ এবং ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করার জন্য সরকার যথেষ্ট সক্রিয় নয়। সন্দেহের ওপর ভিত্তি করে বিভাজন সৃষ্টি করা ব্যক্তিদের দায় কম নয়। সরকারের কাছে আছে দায়িত্ব দেশের আইন এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার। সরকারের পক্ষপাত এবং উদাসীনতা অব্যাহত থাকলে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশ ক্রমশ ভয়ঙ্কর মাত্রায় পৌঁছাবে এবং নাগরিকরা সন্ত্রাসের শিকার হতে বাধ্য হবে। এই অভাবনীয় উদাসীনতা শুধু রাজনৈতিক নেতাদের নয়, সাধারণ মানুষের জীবনকেও হুমকির মুখে ফেলে, যা সামগ্রিকভাবে দেশের সামাজিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য এক বড় সংকট। দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো এবং সাধারণ মানুষের আস্থা রক্ষার জন্য এখনই তৎপর পদক্ষেপ গ্রহণের সময় এসেছে।

উসমান হাদীর ওপর হামলা রাষ্ট্রের অক্ষমতা, রাজনৈতিক সহিংসতা এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দাপটের প্রতীক। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে দেশের সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক কর্মী, অনলান ব্লগার, একটিভিস্ট, মানবাধিকার কর্মী, জার্নালিস্ট এবং ভিকটিমদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের প্রধান দায়িত্ব। সরকারের উদাসীনতা শুধু হত্যাকারীদের সাহস বাড়াচ্ছে না, বরং দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো এবং মানুষের বিশ্বাসও ক্ষুণ্ণ করছে। ন্যায্য বিচার, হত্যাকারীদের গ্রেফতার এবং রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া দেশের ভবিষ্যত গঠন সম্ভব নয়। সরকার যদি সত্যিই দেশের গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধ রক্ষা করতে চায়, তাহলে এখনই সময় হাদীর ওপর হামলার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার, ষড়যন্ত্র উদঘাটন এবং ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার। গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, এবং মানবাধিকারের রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করা, হত্যাকারী গ্রেফতার করা এবং রাজনৈতিক কর্মী, ব্লগার, সাংবাদিক ও সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া দেশের রাজনৈতিক পরিবেশকে শান্ত রাখা সম্ভব নয়।

ছবি: DBC News থেকে সংগৃহীত