জাতির সঙ্গে যে নির্মম বেঈমানি চলছে, তার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সাবেক সামরিক সচিব মেজর জেনারেল কবির আহমেদ। দেশের জনগণ এবং আইনপ্রণেতাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী, ট্রাইব্যুনালে ওয়ারেন্ট জারি হওয়া এই ব্যক্তিকে গত দুইদিন আগে হাউস অ্যারেস্ট করা উচিত ছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত তার কোনো সুনির্দিষ্ট খবর পাওয়া যাচ্ছে না। এই অদ্ভুত অবস্থা শুধুই জনমনের মধ্যে সন্দেহ ও অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে অভিযোগ রয়েছে যে, কবির আহমেদের পালিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় সরাসরি সহযোগিতা করেছে সেনাপ্রধান ওয়াকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে লে. জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম (সিজিএস), ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সেলিম আজাদ (ডিএমআই), মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর (ডি/জি/এফ/আই), ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তৌফিক (ডি/জি/এফ/আই), এবং ঢাকা আর্মি সিকিউরিটি ইউনিটের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আনোয়ার জাহিদ এই প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকার কথা বলা হচ্ছে।
Author: Maidul Islam
হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসনামল ও ভারতের পৃষ্ঠপোষকতা
বাংলাদেশের রাজনীতি আজ এক গভীর দ্বন্দ্বের মুখোমুখি। ১৬ বছর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট শাসন চালু ছিল, যেখানে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, বিচার ব্যবস্থা, সংবিধান, নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন- সবকিছুকে কেবল সরকারের স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছিল। এই দীর্ঘ সময়ে দেশজুড়ে মানুষের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছিল, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নিপীড়ন ও স্বাধীন মত প্রকাশের ওপর দমননীতি কার্যকর হয়েছিল। কিন্তু হাসিনার স্বৈরাচারী শাসন যে দীর্ঘসময় টিকে থাকতে পেরেছিল, তার পেছনে ভারতের নিঃসন্দেহ সমর্থন ও হস্তক্ষেপ অপরিহার্য। ভারতের এই সহায়তা ছাড়া হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসন এত দীর্ঘ সময় স্থায়ী হতে পারত না। এটি স্পষ্ট করেছিল যে, ভারতের স্বার্থ বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থের উপরে অবস্থান করছিল। ভারত বাংলাদেশকে এক রাজনৈতিক প্রান্তিকতা ও কৌশলগত সুবিধার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করছেল। ভারতের লক্ষ্য শুধু ভূরাজনৈতিক আধিপত্য অর্জন নয়, তারা চায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে নিজেদের স্বার্থে নিয়ন্ত্রণ করা। ট্রানজিট চুক্তি, সীমান্ত সীমারেখা, পানিসংক্রান্ত বিষয়, বিদ্যুৎ ও বাণিজ্য all ক্ষেত্রেই তারা বাংলাদেশকে নিজের শোষণমূলক স্বার্থে ব্যবহার করেছিল। অথচ বাংলাদেশের জনগণ ন্যায্য অধিকার দাবি করলে, সেই দাবি অবহেলা করা হয়েছিল। এই দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট করেছিল যে, ভারতের স্বাভাবিক সম্পর্কের ধারণা প্রকৃতপক্ষে একধরনের উপনিবেশী মনোভাবের সঙ্গে যুক্ত ছিল।
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের মিছিল: সরকারের ব্যর্থতার নগ্ন চিত্র
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের স্বরূপে যে শিক্ষা ও শিক্ষার্থী সংগঠনগুলোর অবদান অপরিসীম, তার মধ্যে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু আজ অবস্থা হলো, যে সন্ত্রাসী ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগকে আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেই দল প্রকাশ্যে ঝটিকা মিছিল করছে, স্লোগান দিচ্ছে এবং জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। এটি শুধু একটি রাজনৈতিক দলের প্রতিহিংসা নয়, বরং সরকারের ব্যর্থতার নগ্ন চিত্র। যখন এমন একটি সংগঠন এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে, তখন প্রশ্ন ওঠে, সরকার কি সঠিকভাবে তাদের দমন বা প্রতিরোধে সক্ষম নাকি তারা নিজস্ব স্বার্থের কারণে নীরব দর্শক হিসেবে থেকে যাচ্ছে। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ শুধু মিছিল করছে না, তারা প্রতিটি পদক্ষেপে প্রমাণ দিচ্ছে যে তারা এখনও দেশের বিভিন্ন ওয়ার্ড, ইউনিয়ন থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর উপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম। তারা স্লোগান দিয়ে, প্ল্যাকার্ড হাতে তুলে, দেশের বিভিন্ন যায়গায় নিজেদের আধিপত্য দেখাচ্ছে। এই পরিস্থিতি জনগনের জন্য ভীতিকর এবং তাদের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার হরণ করছে। সঠিকভাবে আইন প্রয়োগ না হলে, এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য ভয়াবহ সংকেত হিসেবে রূপ নেবে।
দুর্বল বিএনপি, শক্তিশালী জামায়াত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিদিন নতুন সমীকরণ তৈরি হচ্ছে। এক সময়ের অন্যতম প্রধান বিরোধী দল বিএনপি আজ এক গভীর সংকটের মধ্যে পড়েছে। তাদের সংগঠনের ভাঙন, দুর্বল নেতৃত্ব, এবং ধারাবাহিক ভুল সিদ্ধান্তের কারণে জনপ্রিয়তা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। অন্যদিকে, বিতর্কিত হলেও জামায়াতে ইসলামী কিছু জায়গায় নিজেদের সংগঠন ধরে রাখার কারণে সীমিতভাবে হলেও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করছে। বিএনপির প্রধান নেতৃত্ব এখন কার্যত লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের হাতে। দেশে না থেকেও তিনি দূর থেকে সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন। এতে তৃণমূল নেতাদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। তারেক রহমানের দুর্নীতি ও অতীতের কালো অধ্যায় জনগণের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনের ডাক দিলেও তা বাস্তবে রূপ নিতে পারেনি। পুলিশি দমন-পীড়ন অবশ্যই একটি কারণ, কিন্তু বিএনপির সংগঠনকে মজবুত করে মাঠে থাকার সক্ষমতাও নেই। বারবার আন্দোলনে ব্যর্থতা তাদের কর্মীদের হতাশ করেছে।
৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন: ছাত্ররাজনীতির পুনর্জাগরণ নাকি পুরোনো সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি?
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে গণআন্দোলন, স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রাম, সব ক্ষেত্রেই ডাকসু নেতারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে এই প্রতিষ্ঠান কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। নির্বাচনের নামে ছাত্রলীগের একচেটিয়া দখল, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও জালিয়াতির কারণে ডাকসু তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছিল। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্য দিয়ে ছাত্রসমাজের মধ্যে আবারও আলোচনার ঝড় উঠেছে। প্রশ্ন উঠছে, এ নির্বাচন কি সত্যিই শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর ফিরিয়ে আনবে, নাকি এটি আরেকটি প্রহসন হয়ে যাবে?
