CategoriesDemocracyHuman RightsJusticePolitics

১৬ বছরের ক্ষুদার্ত বিএনপি

বাংলাদেশের রাজনীতির অঙ্গনে বিএনপি (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) একটি বিতর্কিত নাম। দীর্ঘ ১৬ বছরে ক্ষমতা না পাওয়া দলটি ক্ষমতার লোভে বিভোর, আজও দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থের পরিবর্তে নিজের স্বার্থ ও পারিবারিক স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দেয়। দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ আজ আগাম নির্বাচন চায় না, কারণ তারা দেশের স্থিতিশীলতা ও শান্তি চায়। কিন্তু বিএনপি একা কঠোরভাবে ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজনের দাবি করছে। কেন তারা একা এতো তাগিদ দিচ্ছে? এর পেছনে কি রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা, নাকি শুধুই ক্ষমতার লোভ?

বিএনপির রাজনীতির মূল চালিকা শক্তি হলো ক্ষমতা দখলের প্রবল আকাঙ্খা। তারা শুধু ক্ষমতায় আসতে চায়, সে যেকোনো মূল্যে হোক। তাদের রাজনীতি শুধুমাত্র ভোটের মাধ্যমে নয়, বরং ভোটারদের আতঙ্কিত করা, বিরোধীদের ওপর হামলা, সন্ত্রাস-নিপীড়ন ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ক্ষমতা কেবল একটি পদ বা অফিস নয়, তাদের কাছে এটি নিজের পরিবারের নিরাপত্তা ও প্রভাব বিস্তারের মাধ্যম। এই স্বার্থপর লোভ বিএনপিকে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও শান্তির পথে বাধা সৃষ্টি করতে বাধ্য করছে। তারা জনগণের কল্যাণের পরিবর্তে পারিবারিক ও নিজেদের ক্ষমতার স্বার্থে রাজনীতিতে লিপ্ত।

বিএনপির শাসনামলে দেশের ইতিহাসে দুর্নীতির এক দিকবিকৃত অধ্যায় লেখা হয়েছিল। তাদের শাসনামলে দেশের জনগণ উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত হয় এবং দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি ঘটে। এই দুর্নীতির রাজনীতিই আজও বিএনপির গায়ের রং। তারা শুধু ক্ষমতায় যেতে নয়, ক্ষমতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক সুবিধা হাসিলের জন্য নিয়োজিত। সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কোনও বাস্তব চেষ্টা নেই, বরং তাদের শাসনআমলে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ণ করছে তারা। এটি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য মারাত্মক ক্ষতি। রাজনীতির নামে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও ভয়ভীতি ছড়ানোর মাধ্যমে বিএনপি নিজস্ব ক্ষমতা ধরে রাখে। তাদের নেতা-কর্মীরা ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর চাঁদাবাজি চালিয়ে জনগণের জীবন নরক বানিয়ে দেয়। সন্ত্রাসের মাধ্যমে বিরোধী দলের নেতৃত্বকে ভয়ভীতি দেখিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা বিএনপির অপকর্মের অন্যতম দিক।

এই চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের রাজনীতি দেশের গণতান্ত্রিক অবকাঠামোকে দুর্বল করছে, জনগণের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের ওপর কঠিন আঘাত হানছে। যারা দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতার কথা ভাবেন, তাদের জন্য বিএনপির এই অরাজনৈতিক কার্যকলাপ উদ্বেগের বিষয়। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সংকটাপন্ন হলেও বিএনপি এর পরিবর্তে একত্রীকরণ বা সংলাপের পক্ষে নয়। তারা দ্রুত নির্বাচন চায়, কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য দেশের গণতন্ত্র নয়, বরং ক্ষমতার জন্য নিজের দলের একত্রীকরণ ও সক্রিয় হওয়া। দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্টের এই চেষ্টা একদিকে রাজনৈতিক সংকট বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে দেশের সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। একদিকে বিএনপি নির্বাচনের দাবিতে জোর করছে, অন্যদিকে তারা নিজেরাই নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করছে না। নির্বাচনের পূর্বে রাজনৈতিক সহিংসতা ও হুমকির সংস্কৃতি বৃদ্ধির পেছনে বিএনপির রাজনৈতিক কূটনীতি রয়েছে। এই দ্বৈতচরিত্র বাংলাদেশের রাজনীতিকে এক অন্ধকার গহ্বরে ঠেলে দিচ্ছে।

দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য দরকার একটি সৎ, দায়বদ্ধ ও জনগণের পাশে দাঁড়ানো রাজনৈতিক দল। বর্তমান বিএনপির মতো ক্ষুদার্ত স্বার্থপর দল থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। রাজনীতির মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত দেশের সার্বিক উন্নয়ন, মানবাধিকার রক্ষা, দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা। ক্ষমতার লোভের রাজনীতির পরিবর্তে মানুষের আশা ও স্বপ্ন পূরণের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সুতরাং, দেশের সকল রাজনৈতিক দলকে উচিত জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করা এবং দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের রাজনীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া। শুধু তবেই বাংলাদেশ স্বাধীন, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে।