বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিদিন নতুন সমীকরণ তৈরি হচ্ছে। এক সময়ের অন্যতম প্রধান বিরোধী দল বিএনপি আজ এক গভীর সংকটের মধ্যে পড়েছে। তাদের সংগঠনের ভাঙন, দুর্বল নেতৃত্ব, এবং ধারাবাহিক ভুল সিদ্ধান্তের কারণে জনপ্রিয়তা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। অন্যদিকে, বিতর্কিত হলেও জামায়াতে ইসলামী কিছু জায়গায় নিজেদের সংগঠন ধরে রাখার কারণে সীমিতভাবে হলেও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করছে। বিএনপির প্রধান নেতৃত্ব এখন কার্যত লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের হাতে। দেশে না থেকেও তিনি দূর থেকে সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন। এতে তৃণমূল নেতাদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। তারেক রহমানের দুর্নীতি ও অতীতের কালো অধ্যায় জনগণের মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলনের ডাক দিলেও তা বাস্তবে রূপ নিতে পারেনি। পুলিশি দমন-পীড়ন অবশ্যই একটি কারণ, কিন্তু বিএনপির সংগঠনকে মজবুত করে মাঠে থাকার সক্ষমতাও নেই। বারবার আন্দোলনে ব্যর্থতা তাদের কর্মীদের হতাশ করেছে।
২০০১–২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন ব্যাপক দুর্নীতি, হাওয়া ভবনের চাঁদাবাজি, জঙ্গিবাদের উত্থান, এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন সাধারণ মানুষের মনে স্থায়ী ক্ষত সৃষ্টি করেছে। জনগণ এখনও সেই দুঃস্বপ্ন ভুলতে পারেনি। কখনো আন্দোলনের ডাক, কখনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ, আবার কখনো বয়কট -এই দোদুল্যমানতা বিএনপিকে অবিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছে। ভোটাররা মনে করছে, বিএনপির কোনো সুস্পষ্ট রোডম্যাপ নেই।
জামায়াতের অন্যতম শক্তি তাদের ক্যাডারভিত্তিক সংগঠন। গ্রাম-শহরের প্রতিটি স্তরে তাদের নিবেদিত কর্মী আছে যারা দলীয় আদর্শে অটল। এ কারণে দলটি রাজনৈতিক ঝড়-ঝাপটার মধ্যেও কিছুটা টিকে আছে। জামায়াত এখনো ধর্মভিত্তিক আবেগ ব্যবহার করে জনগণের একটি অংশকে প্রভাবিত করছে। বিশেষ করে মসজিদ ও ইসলামি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগিয়ে তারা নিজেদের অবস্থান ধরে রাখছে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের অতীত কলঙ্কিত হলেও তারা নতুন প্রজন্মকে বোঝানোর চেষ্টা করছে যে তারা ইসলামভিত্তিক ‘শান্তি ও ন্যায়ের’ রাজনীতি করতে চায়। যদিও এটি মূলত কৌশলগত প্রচার, তারপরও কিছু তরুণ এতে প্রভাবিত হচ্ছে। বিএনপি যখন নেতৃত্বহীনতা ও ভাঙনের শিকার, তখন জামায়াত নিজেদের সংগঠন ধরে রেখে ধীরে ধীরে বিকল্প শক্তি হিসেবে জায়গা করে নিতে চাইছে। ফলে বিএনপির শূন্যস্থান জামায়াত আংশিকভাবে পূরণ করছে।
যদিও জামায়াত সীমিতভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে, তবুও তাদের ইতিহাসের কলঙ্ক -১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা, যুদ্ধাপরাধ, এবং সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড -জনগণের মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে বিএনপি বড় দল হলেও সংগঠন ও নেতৃত্বের দুর্বলতায় ক্রমশ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী বিরোধী দল। কিন্তু বিএনপি সেই ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। অন্যদিকে জামায়াত জনপ্রিয়তা বাড়ালেও তাদের অতীতের অপরাধের দায় কখনোই মুছে যাবে না। এই বাস্তবতায় নতুন বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ছাড়া দেশের রাজনীতি সুস্থ পথে ফিরবে না।
