বাংলাদেশে গণতন্ত্রের স্বরূপে যে শিক্ষা ও শিক্ষার্থী সংগঠনগুলোর অবদান অপরিসীম, তার মধ্যে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু আজ অবস্থা হলো, যে সন্ত্রাসী ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগকে আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেই দল প্রকাশ্যে ঝটিকা মিছিল করছে, স্লোগান দিচ্ছে এবং জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। এটি শুধু একটি রাজনৈতিক দলের প্রতিহিংসা নয়, বরং সরকারের ব্যর্থতার নগ্ন চিত্র। যখন এমন একটি সংগঠন এতটা বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে, তখন প্রশ্ন ওঠে, সরকার কি সঠিকভাবে তাদের দমন বা প্রতিরোধে সক্ষম নাকি তারা নিজস্ব স্বার্থের কারণে নীরব দর্শক হিসেবে থেকে যাচ্ছে। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ শুধু মিছিল করছে না, তারা প্রতিটি পদক্ষেপে প্রমাণ দিচ্ছে যে তারা এখনও দেশের বিভিন্ন ওয়ার্ড, ইউনিয়ন থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর উপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম। তারা স্লোগান দিয়ে, প্ল্যাকার্ড হাতে তুলে, দেশের বিভিন্ন যায়গায় নিজেদের আধিপত্য দেখাচ্ছে। এই পরিস্থিতি জনগনের জন্য ভীতিকর এবং তাদের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার হরণ করছে। সঠিকভাবে আইন প্রয়োগ না হলে, এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য ভয়াবহ সংকেত হিসেবে রূপ নেবে।
সরকার বারবার দাবি করে যে তারা আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখে, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই নিষিদ্ধ সংগঠনের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বিএনপি বা অন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলের শান্তিপূর্ণ মিছিল হলে তা অবিলম্বে দমন করা হয়, গ্রেফতার করা হয় এবং লাঠিচার্জ চালানো হয়। কিন্তু ছাত্রলীগের মতো সন্ত্রাসী সংগঠন যখন একই ধরনের কার্যক্রম চালাচ্ছে, তখন প্রশাসন নীরব। এটি সরকারের দ্বিচারিতা ও রাজনৈতিক পক্ষপাতের সবচেয়ে স্পষ্ট প্রমাণ। ছাত্রলীগের মিছিল শুধুই রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের উপায় নয়; এটি জনগণের ওপর ভীতি চাপানো, অস্থিরতা সৃষ্টি করার সরাসরি উপায়। দেশের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে চায়, তারা এখন নানা ধরনের হুমকি ও চাপের মুখোমুখি। এই পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদে শিক্ষার মান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। শিক্ষার্থীরা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও স্বাধীনতা হারাচ্ছে, এবং সরকারের নির্লিপ্ততা তাদের ওপর আরও চাপ তৈরি করছে।
ছাত্রলীগের অতীত অপরাধ অনস্বীকার্য। তারা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণসহ অসংখ্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত। যে সংগঠনকে সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, তার এই প্রকাশ্য কর্মকাণ্ড মানে হলো জনগণের নিরাপত্তাকে এড়িয়ে যাওয়া। সরকারের উচিত অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করা। নইলে আইন ও শৃঙ্খলার প্রতি জনগণের আস্থা চরমভাবে ক্ষুণ্ন হবে। যদি সরকার অবিলম্বে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের মিছিল বন্ধ না করে, তাদের গ্রেফতার না করে, এবং শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে, তাহলে জনগণই সরাসরি প্রতিবাদে নামবে। এই প্রতিবাদ হবে শান্তিপূর্ণ না হলেও শক্তিশালী এবং গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার একমাত্র হাতিয়ার। এটি সরকারের জন্য একটি সতর্কবার্তা, যে তারা যদি দ্বিচারিতার পথ অব্যাহত রাখে, তবে জনগণের অসন্তোষ ক্রমশ ভয়াবহ রূপ নেবে।
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের প্রকাশ্য ঝটিকা মিছিল সরকার ও প্রশাসনের ব্যর্থতা ও দ্বিচারিতার প্রমাণ। এটি দেশের গণতন্ত্র, শিক্ষাব্যবস্থা এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি। সরকারের দায়িত্ব শুধু তীব্র সমালোচনা করা নয়; বরং অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। নীরবতা ও নির্লিপ্ততা আর গ্রহণযোগ্য নয়; এখনই সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
