বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার রাস্তায় আবারও দেখা যাচ্ছে এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের পতাকা উড়ছে, স্লোগান গর্জে উঠছে, আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দাঁড়িয়ে শুধু দেখছে। প্রশ্ন একটাই এই দেশে কি আইন আছে? এই সরকার কি আদৌ নিরপেক্ষ? অন্তবর্তীকালীন সরকার, বিশেষ করে ড. ইউনুসের নেতৃত্বে আসা বর্তমান প্রশাসন জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তারা দেশে ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, সেই গণতন্ত্রের নামে চলছে ভয়াবহ দ্বৈত নীতি। একদিকে সরকারের বিরোধীদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা, গ্রেপ্তার, মামলার পাহাড়; অন্যদিকে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ প্রকাশ্যে মিছিল করছে, স্লোগান দিচ্ছে, রাস্তাজুড়ে ক্ষমতার প্রদর্শন করছে অথচ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। এটা কি তাহলে সরকারের নীরব সমর্থন? বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, যে কোনো নিষিদ্ধ সংগঠন রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাতে পারে না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই আইন কার জন্য? সরকারের ভিন্মমতের জার্নালিস্ট, ব্লগার, সাধারন মানুষ যখন রাস্তায় নামতে চায়, তখন পুলিশি লাঠি আর গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখা যায়। অথচ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যদি মিছিল করে, তখন আইন ঘুমিয়ে যায়! এটা কি আইনশৃঙ্খলার সমতা, নাকি প্রশাসনিক পক্ষপাতিত্বের নগ্ন উদাহরণ?
সরকার দাবি করছে তারা নিরপেক্ষ, কিন্তু বাস্তবতা বলছে অন্য কথা। রাজনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার দায়িত্ব ছিল এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের, অথচ তাদের কর্মকাণ্ড প্রমাণ করছে তারা হয়তো পুরনো শাসকদের ছায়া থেকে বের হতে পারেনি। অনেক বিশ্লেষকের মতে, সরকার এখনো সেই প্রশাসনিক আমলাতন্ত্রের কবলে, যারা আগের ফ্যাসিস্ট আমলে আওয়ামী শাসকদের দোসর হিসেবে কাজ করেছে। ফলাফল পুরনো প্রভাববলয় এখনো প্রশাসনের রক্তে মিশে আছে, আর সেই কারণেই নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর মিছিলের সময় পুলিশ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। ঢাকার রাস্তায় এই মিছিলগুলো কেবল আইন ভঙ্গ নয়, এটি জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা। কারণ, সরকার জনগণকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা নতুন নৈতিক মানদণ্ড স্থাপন করবে কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের মধ্য দিয়েই তারা পুরনো অন্ধকারের পথে হাঁটছে। জনগণ প্রশ্ন করছে যদি নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠনও আইনের বাইরে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, তাহলে সাধারণ নাগরিকরা কিসের নিরাপত্তা আশা করবে?
অন্তবর্তীকালীন সরকারের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব ছিল আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা, কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। তাদের ব্যর্থতা কেবল প্রশাসনিক নয়, এটি নৈতিক ব্যর্থতাও। কারণ, যখন সন্ত্রাসী নিষিদ্ধ সংগঠনকে মাঠে নামতে দেওয়া হয়, তখন সেটি দেশের ন্যায়বিচার ব্যবস্থাকে অপমান করা হয়। এটি প্রমাণ করে সরকার এখনো রাজনৈতিক আপসের ফাঁদে বন্দী। এ পরিস্থিতি শুধু দেশের ভেতরে নয়, আন্তর্জাতিক পরিসরেও ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো যারা বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছে, তারা নিশ্চয়ই প্রশ্ন করবে যদি নিষিদ্ধ দলগুলোকেও মিছিলের সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে সরকারের নিরপেক্ষতা কোথায়? একই সঙ্গে এই পরিস্থিতি রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট করছে। বিরোধী দলগুলো এখন দাবি তুলছে যে সরকার আসলে নিরপেক্ষ নয়, বরং একটি বিশেষ রাজনৈতিক শক্তির প্রতি সহানুভূতিশীল। সরকারের এই দুর্বল অবস্থান ভবিষ্যতের নির্বাচন প্রক্রিয়াকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে।
অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. ইউনুস নিজেই বারবার বলেছেন, তিনি “ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার পথে” হাঁটবেন। কিন্তু জনগণ এখন দেখতে চায় সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তব রূপ। নিষিদ্ধ সংগঠনের মিছিল যদি রাস্তায় দেখা যায়, আর প্রশাসন যদি নির্বিকার থাকে, তাহলে জনগণ বুঝবে পরিবর্তনের নামে এসেছে আরেকটি নাটক, যেখানে চরিত্র পাল্টেছে, কিন্তু চিত্রনাট্য একই। বাংলাদেশ আজ যে সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তা কেবল রাজনৈতিক নয়, এটি নৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংকটও। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ও সরকার সবাই যদি নীরব দর্শক হয়ে যায়, তাহলে এই দেশ আবারও সেই অন্ধকার ফ্যাসিবাদের দিকে ফিরে যাবে, যেখান থেকে আমরা মুক্তি চেয়েছিলাম। এখনই সময় সরকারের জেগে ওঠার। জনগণকে পরিষ্কার উত্তর দিতে হবে নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামীলীগ ও সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের মিছিল কেন হচ্ছে? কার নির্দেশে? এবং কার স্বার্থে? এই প্রশ্নের উত্তর না দিলে জনগণই একদিন রাস্তায় নামবে তখন আর কোনো মিছিলের অনুমতির প্রয়োজন হবে না, কারণ তখন সেটি হবে গণপ্রতিরোধের মিছিল, অন্যায়ের বিরুদ্ধে জনগণের সরব প্রতিবাদ।
