CategoriesDemocracyHuman RightsJusticePolitics

দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিএনপির সন্ত্রাস ও সহিংসতা: ক্ষমতার লালসায় অন্ধ দল

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে যে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় বিএনপি নেতা-কর্মীরা ক্ষমতা, অর্থ ও প্রভাবের লোভে সহিংসতার পথ বেছে নিচ্ছে। মনোনয়ন না পেলে তারা শৃঙ্খলা বিপর্যয়, লুটপাট, ভাঙচুর এবং অশান্তি সৃষ্টি করে, যা শুধু তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ পূরণ করে না, বরং সাধারণ নাগরিকদের জীবনেও ভয়, অনিশ্চয়তা এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি ডেকে আনে। ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হচ্ছে, এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়ছে। এতে স্পষ্ট যে, বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংস্কার এবং স্বচ্ছ মনোনয়ন প্রক্রিয়ার অভাবে তৃণমূলের নেতারা নিজের হতাশা প্রকাশের জন্য সহিংসতাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার এমন অবক্ষয় দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে দুর্বল করে এবং দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকিতে ফেলে।

বিএনপির দলের অভ্যন্তরীণ দুর্বলতা এবং নেতৃত্বের অভাব এই সহিংসতাকে আরও তীব্র করে তুলেছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যখন মাঠে উপস্থিত নয় বা দলের নীতি এবং মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা রাখে না, তখন হতাশ নেতারা নিজেদের প্রতিশোধের পথ হিসেবে সহিংসতা বেছে নেয়। এই মানসিকতা কেবল তাদের দলকে বিভাজিত করে না, বরং রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে নষ্ট করে এবং নির্বাচনের পরিবেশকেও বিষাক্ত করে। দীর্ঘমেয়াদি দিক থেকে, এটি জনমতের ক্ষয়, দলের জনপ্রিয়তা হ্রাস এবং সমাজে রাজনৈতিক অবিশ্বাস তৈরি করে। দলীয় সংস্কারের অভাবে স্বাভাবিকভাবে তৃণমূলের হতাশা, প্রতিহিংসা ও লোভ-চাপের প্রতিফলন সহিংসতার মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এ পরিস্থিতিতে মিডিয়া, নাগরিক সমাজ ও বুদ্ধিজীবীদের সৎ সমালোচনা এবং জনমতের মাধ্যমে দলকে স্বচ্ছ ও ন্যায়সঙ্গত মনোনয়ন ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনা বিএনপির জন্য অপরিহার্য।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্বও কম নয়। অন্তবর্তীকালীন সরকার এবং প্রশাসন যদি নিরপেক্ষভাবে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হ্রাস পায়। পুলিশ, প্রশাসন এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা এবং কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করা জরুরি। কোন দল ক্ষমতায় থাকুক বা না থাকুক, অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। শুধুমাত্র বাহিনীর উপস্থিতি বা রাজনৈতিক প্রভাব দেখিয়ে ভোটের আগে শান্তি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়; বরং নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণ, সচেতনতা এবং সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। নির্বাচনকালীন সহিংসতা রোধে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজস্ব দায়িত্বশীলতা বজায় রাখতে হবে এবং নাগরিকদের উপর ভয় চাপানো থেকে বিরত থাকতে হবে।

শেষ পর্যন্ত, বিএনপির রাজনৈতিক সহিংসতার মূল সমাধান করতে হলে প্রয়োজন অভ্যন্তরীণ সংস্কার, স্বচ্ছ মনোনয়ন প্রক্রিয়া এবং দায়িত্বশীল নেতৃত্ব। বিএনপিরউচিত তাদের তৃণমূলের মধ্যে স্বচ্ছতা, যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রার্থী বাছাই এবং সহিংসতার প্রবণ নেতাদের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। যদি এই ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয়, তাহলে নির্বাচনের পরিবেশ শুধু বিষাক্ত হবে না, দেশের গণতান্ত্রিক ভিত্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আর সেই দায় বিএনপিকেই নিতে হবে। বিএনপি একটি বড় দল হিসেবে একমাত্র দায়িত্বশীল, ন্যায়সঙ্গত এবং স্বচ্ছ রাজনৈতিক সংস্কার নিশ্চিত করলে দেশের সাধারণ মানুষ শান্তি, নিরাপত্তা এবং উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হতে পারবে। তা না হলে দেশের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে বিএনপির চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ ও সহিংস রাজনীতিকদের ক্ষমতায় ফেরানো যাবে না। বিএনপির মতো দল, যারা জনগণের পরিবর্তে লাঠি ও আগুনে বিশ্বাস করে, তাদের পরাজয়ই হবে বাংলাদেশের রাজনীতির সবচেয়ে বড় জয়।