CategoriesDemocracyHuman RightsJusticePolitics

৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন: ছাত্ররাজনীতির পুনর্জাগরণ নাকি পুরোনো সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি?

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে গণআন্দোলন, স্বৈরাচারবিরোধী সংগ্রাম, সব ক্ষেত্রেই ডাকসু নেতারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে এই প্রতিষ্ঠান কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। নির্বাচনের নামে ছাত্রলীগের একচেটিয়া দখল, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও জালিয়াতির কারণে ডাকসু তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছিল। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্য দিয়ে ছাত্রসমাজের মধ্যে আবারও আলোচনার ঝড় উঠেছে। প্রশ্ন উঠছে, এ নির্বাচন কি সত্যিই শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বর ফিরিয়ে আনবে, নাকি এটি আরেকটি প্রহসন হয়ে যাবে?

ডাকসু শুধু একটি ছাত্রসংগঠন নয়, এটি বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার অন্যতম ক্ষেত্র। এখান থেকেই উঠে এসেছেন দেশের বহু নামকরা রাজনৈতিক নেতা। অতীতে ডাকসু আন্দোলনকারীরা গণতন্ত্রের পক্ষে সোচ্চার হয়েছেন, যেকোনো সরকারের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘকাল ধরে ডাকসুর নির্বাচন স্থগিত রাখা, পরে অনুষ্ঠিত হলেও ভোট কারচুপি ও সহিংসতার কারণে শিক্ষার্থীরা এর প্রতি আস্থা হারিয়েছে। ছাত্রলীগ ও তৎকালীন আওয়ামী ক্ষমতাসীনদের প্রভাব এতটাই প্রকট ছিল যে, অন্য কোনো সংগঠন সেখানে ন্যায্যভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি।

৯ সেপ্টেম্বর যদি ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে হয়, তবে ছাত্ররা তাদের হারানো আস্থা ফিরে পাবে। ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, বা অন্য কোনো ছাত্রসংগঠনের দৌরাত্ম্য নয়, বরং সৎ, মেধাবী ও সাহসী নেতৃত্ব উঠে আসবে। এটি কেবল ক্যাম্পাস নয়, দেশের ভবিষ্যতের জন্যও অত্যন্ত ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। ডাকসু নির্বাচন কেবল ছাত্রদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয় নয়, এটি গণতন্ত্রের ভিত্তি শক্ত করার একটি ঐতিহাসিক সুযোগ। যদি এবারও দলীয় প্রভাব ও কারচুপির মাধ্যমে নির্বাচন ভন্ডুল করা হয়, তবে ছাত্রসমাজের ক্ষোভ বিস্ফোরিত হবে। কিন্তু যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তবে ছাত্ররা দেশের রাজনীতিকে একটি নতুন দিকনির্দেশনা দিতে সক্ষম হবে।